মিডিয়া খবরঃ- সাজেদুর রহমানঃ-
৫ই ডিসেম্বর ১৯৭১।
সকাল ৯ টায় মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল রাও আমাদের ক্যম্পে এসে নির্দেশ দিলেন সন্ধা ৭টায় পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাটি পানিহাতা আক্রমন করতে হবে। তার নির্দেশ শুনে কোম্পানির যোদ্ধারা কিছুটা ভড়ঁকে গেল। কারণ হিসাবে কিছুদিন আগে একই ঘাটিতে আক্রমন করতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। তবে সকল ভয় অতিক্রম করে দেশ স্বাধীন করতে হবে যে কোন মুল্যে, পিছু হাঁটা চলবে না।
সকল যোদ্ধাকে একত্র হতে আদেশ দিয়ে ব্রিফিং দিলেন কোম্পানী কমান্ডার মোঃ রহমতুল্লাহ। সবাই “জয় বাংলা” বলে অপারেশনে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করল। সন্ধায় মিত্র বাহিনীর কর্নেল রাও এসে যোদ্ধাদের প্রস্তত দেখে খুশি হলেন ।
ঘুটঘুটে অন্ধকার সকলে চলল, আনুমানিক রাত ১১টায় পাকবাহিনীর ক্যম্পের অতি নিকটে পৌঁছে গেল। আন্ধাররাতে কিছুই দেখা যাচিছল না। শুধু পাক ক্যাম্প দেখা যাচেছ হারিকেনের প্রজ্জ্বলিত আলোয়। বেশ কিছুক্ষণ কাদাযুক্ত ধানক্ষেতে চুপটি মেরে থাকার পর আদেশ দিলাম ফায়ারিংয়ের। মিত্রবাহিনী সেল মারা শুরু করল। আর আমরা এল এম জি, এস এল আর ও রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকলাম। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে যুদ্ধ চলল। পাকবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে সাজোঁয়া গাড়ি করে পালিয়ে গেল। ভোর ৪টায় পানিহাতা ক্যাম্পে রেড করলাম। বিজয় নিশান উড়ানো হল ময়মনশিংহ জেলার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাটি পানিহাতায়। শত্রুমুক্ত ঘাটিতে শুরু হল আনন্দ উল্লাস।
বিশ্বদরবারের ৪ই ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের যে অধিবেশন চলছিলো তা ৫ই ডিসেম্বর পুনরায় বসে তাতে সোভিয়েট ইউনিয়নের এক প্রস্তাবে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক ‘রাজনৈতিক নিষ্পত্তি’ প্রয়োজন যার ফলে বর্তমান সংঘর্ষের অবসান নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এবং পাকবাহিনীর যে সহিংসতার দরুণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। একমাত্র পোল্যান্ড প্রস্তাবটি সমর্থন করে। চীন ভোট দেয় বিপক্ষে। অন্য সকল সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে। ঐ দিন আরও আটটি দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে আর একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এবার সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দ্বিতীয় ভেটো প্রয়োগ করে। একই সময়ে ‘তাস’ মারফত এক বিবৃতিতে সোভিয়েট সরকার ‘পূর্ব বাংলার জনগণের আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে’ সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের দাবী জানান, এই সংঘর্ষ সোভিয়েট সীমান্তের সন্নিকটে সংঘটিত হওয়ায় ‘এর সঙ্গে সোভিয়েত নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত, বলে উল্লেখ করে এবং পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে বিবদমান পক্ষদ্বয়ের যে কোনটির সঙ্গে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহবান জানান।
তথ্য সূত্রঃ- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, উইকিপিডিয়া ও অপারেশন পানিহাতা বর্ণনা-কোম্পানী কমান্ডার মোঃ রহমতুল্লাহ , ১১ নং সেক্টর।