মিডিয়া খবর :-
কবির হোসাইনের কবিতা
আধুনিক বেয়নেটের তীক্ষ্ণতায় আদিম পৈশাচিকতার হলি খেলা
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিবারণ করেছে কামজ সুখানুভূতিগুলো
জরায়ুতে রক্তগঙ্গা বয়… নিথর নিশ্চল দেহ
কিন্তু ঈশ্বরের দয়ার কাছে ইতরেরা কিইবা করতে পারে?
অতপর ভূমিষ্ট হলো সেই বিশ্রব্ধ জঠর থেকে এক মানব ভ্রূণ
যার বুকে ঘাড়ে বেয়নেটের দগদগে ক্ষত
আর এভাবেই যুদ্ধের ভয়ংকর ভয়াবহতা ছড়িয়ে দিয়েছিল
পাকিস্তানী হায়েনা আর আমার দেশীয় কিছু হীন মানুষেরা…আমরা ইতিহাস পড়ে পড়ে ঘৃণা করতে শিখেছি
আমরা ঘৃণা করেছি নিরো, কেলিগুলা, আতিয়া হুন, চেঙ্গিজ খানকে
আমরা ঘৃণা করেছি হিটলার ইদি আমীন কিংবা পলপটকে
সেই একই অভাবনীয় নিষ্ঠুরতা! নয়টি মাসের অবিরাম ধ্বংসযজ্ঞ!
অথচ আজ আমরা ঘৃণার সঙ্গায় ঢেলেছি বরফের জল!
সমস্ত ঘৃণা ভ্যানেটি ব্যাগে আজ বন্দী
আমরা জানি না আর কত নিষ্ঠুরতা চালালে
একজন ভয়ংকর মানুষকে মানবতার অপরাধে অপরাধী ভাবা যায়!আমরা মানবতার পক্ষে ব্যানার দেখি, ফেস্টুন দেখি
সভা সেমিনার, রাজনৈতিক উত্তাপ দেখি,
মানবতার আর্তি চেয়ে কানায় কানায় পূর্ণ মাঠ হতে দেখি
আগুন জ্বলতে দেখি বেরিকেড গুপ্ত আক্রমণ দেখি
সেই সব শ্লোগান শুনি যা সেই যুদ্ধের ময়দানে স্বাধীনতা বিরোধীরা
দম্ভ নিয়েই উচ্চারণ করেছিল…
আমাদের লজ্জা হয়না
আমাদের লজ্জা নেই
আমাদের লজ্জা হবে না
তেতাল্লিশ বছরের সেই মানব ভ্রূণ আজ মনোয়ারা ক্লার্ক!
বুকে ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে
ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে… খুঁজে ফেরে মাকে
মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিত মৃতা নারীদের ছবি দেখে আর কাঁদে
‘আমার মা হয় তো এমনই ছিল…’
কি এক করুণ সুর! কি এক করুন আর্তি ছড়িয়ে পড়েছে ইথারে ইথারে
তার অশ্রুজল বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে আমাদের উঠোনে উঠোনে
হয়ত বানের জলে তলিয়ে দেবে আমাদের চেতনার ফসলগুলো
তারপরও কি আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে না একটি বারের জন্য?
সে উত্তর হয়ত কারো জানা নেই…
(মনোয়ারা ক্লার্ক। বেয়োনেটের আঘাত নিয়েই জন্ম তার। পাকিস্তানি সেনারা, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তার মাকে। খোঁচার দাগে মায়ের গর্ভের শিশুর দেহেও কেটে গেছে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে থাকা কানাডিয়ান চিকিৎসক ড: ফেরি। তার স্থান হয় আজিমপুরের সোশাল ওয়েল ফেয়ার হোমে । সেখান থেকে কানাডিয়ান এক দম্পতি ৬ মাস বয়সে তাকে দত্তক সন্তান হিসাবে নিয়ে যান। নাম হয় তার মনোয়ারা ক্লার্ক। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন।